IQNA

১০ রমযান  উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরার ( আ.) শাহাদাত সম ওফাত

21:32 - April 11, 2022
সংবাদ: 3471688
তেহরান (ইকনা): হযরত রাসূলুল্লাহর ( সা.) প্রথম সহধর্মিণী হযরত খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ ( আ.) এর শাহাদাত সম ওফাত দিবস ১০ রমযান । এ দিন হিজরতের তিন বছর আগে পবিত্র মক্কায় তিনি ( আ . ) মৃত্যু বরণ করেন ।

মহানবী ( সা .) ও বনি হাশিমের উপর কুরাইশ গোত্রের সার্বিক কঠিন অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবরোধ আরোপ করলে শে'বে আবী তালিবে( আবূ তালিবের গিরি পথ ও উপত্যকা ) তিন বছরের অধিক কাল মহানবী (সা.) , হযরত আবূ তালিব , হযরত আলী (আ .) , হযরত খাদীজা ( আ. ) , হযরত ফাতিমা ( আ.) এবং বনী হাশিম এই শে'বে আবী তালিবে বহির্জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্তরিন ও অবরুদ্ধ জীবন যাপন করতে বাধ্য হন যা ছিল অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টকর । এ ধরণের তীব্র কষ্টকর পরিস্থিতিতে বৃদ্ধ হযরত আবূ তালিব ও হযরত খাদীজার ( আ.) শারীরিক অবস্থার ভয়ানক অবনতি হয় এবং দীর্ঘ তিন বছরের অধিক কাল ধরে কুরাইশদের অবরোধের অবসান হওয়ার পরপর প্রথমে হযরত আবূ তালিব ( আ.) ও তারপরে হযরত খাদীজা (আ.) ইন্তেকাল করেন । এ দুই আপনজন যারা ছিলেন  কুরাইশদের সকল অন্যায় ,  অত্যাচার , অবিচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে মহানবীর ( সা.) একনিষ্ঠ সাহায্য কারী , আশ্রয়স্থল ও পৃষ্ঠপোষক তাদের মৃত্যুতে মহানবী (সা.) , হযরত ফাতিমা (আ.) , হযরত আলী (আ.) ও বনী হাশিম তীব্র শোকাকীভূত হন । আর সেজন্যই রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আবূ তালিব ও হযরত খাদীজার ওফাতের বছরের নামকরন করেছিলেন আমুল্ হুয্ন্ ( عام الحزن ) অর্থাৎ শোকের বছর । আর এ থেকে স্পষ্ট হয়ে মহানবীর ( সা.) কাছে ও ইসলামের ইতিহাসে এ দুই ব্যক্তির অপরিসীম গুরুত্ব , অবদান ও খেদমত । হযরত আবূ তালিব ( আ.) সবসময় মহানবীকে ( সা.) কুরাইশদের অনিষ্ট ও ক্ষতিসাধন  থেকে রক্ষা করতেন । কুরাইশরা হযরত আবু তালিবের মৃত্যুর আগে মহানবীকে প্রকাশ্যে হত্যার করার উদ্যোগ নেয়ার সাহস করেনি যদিও শে'বে আবী তালিবে অবরুদ্ধ জীবন যাপনের সময় ও তার আগে বেশ কয়েক বার কুরাইশদের  মহানবীকে ( সা.) গোপনে হত্যার ষড়যন্ত্র হযরত আবূ তালিব নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন । ঐ তিন বছরের অধিক কাল স্থায়ী শে'বে আবী তালিবে ( আবূ তালিবের গিরি পথ ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবরোধে হযরত আবূ তালিব ও হযরত খাদীজা তাদের সমুদয় ধন -সম্পদ অবরুদ্ধদের সেবায় ব্যয় করেছিলেন । রিওয়ায়তে বর্ণিত হয়েছে :

وَ أَنْفَقَ أَبُوْ طَالِبٍ وَ خَدِیْجَةُ جَمِیْعَ مَالَیْهِمَا.

হযরত আবূ তালিব ( আ.) ও হযরত খাদীজা ( আ. ) ( ইসলাম এবং অবরুদ্ধদের জন্য ) তাদের সমুদয় সম্পদ ব্যয় করেন । আর এর ফলে হযরত খাদীজার সকল ধন সম্পদ শেষ হয়ে যায় । তিনি ( আ.) বলেছেন : আমার দুটো চামড়ার শিট বা টুকরা  ছাড়া আর কিছুই বিদ্যমান ছিল না ; ঐ দুটো চামড়ার টুকরার একটি বিশ্রামের সময় বিছানার চাদর (হিসাবে) এবং অন্যটি কম্বল ( গায়ের চাদর )  হিসাবে আমি ব্যবহার করতাম ।

    আলীর তরবারি ও খাদীজার ধন সম্পদ ব্যতীত ইসলাম কখনো প্রতিষ্ঠা লাভ করত না । ( দ্র : সুলাইমানী কিত্তানী , ফাতিমাতুয যাহরা ওয়াতারুন ফী মুহাম্মাদ, পৃ : ১১২ )।

   হযরত খাদীজার অধিকাংশ ধন সম্পদ এই তিন চার বছরের অবরোধে ব্যয় ও শেষ হয়ে যায় । কারণ বনী হাশিম ও মহানবীর শেবে আবী তালিবে অবরুদ্ধ থাকা কালে হযরত খাদীজার জামাতা ( তাঁর মেয়ের স্বামী ) আবূল আস ইবনে রবী উট বোঝাই গম ও খেজুর নিয়ে ঐ উপত্যকায় নিয়ে যেতেন এবং অনেক কষ্ট করে ও বিপদের ঝুঁকি নিয়ে খাদ্য অভুক্ত বনী হাশিমের কাছে পৌঁছে দিতেন কুরাইশ কাফির মুশরিকদের অবরোধের কারণে যারা ছিলেন তীব্র খাদ্য সংকটে । এ তিন বছরের অধিক  অবরোধ কালে বনী হাশিমের খাদ্য খাবারের ব্যবস্থা করা হত হযরত খাদীজার ধন সম্পদ থেকে । ( দ্র : রায়াহীনুশ শরীআহ , পৃ : ২১১ ) । হযরত খাদীজা ( আ .) এ সময় অপার ত্যাগ তীতিক্ষা প্রদর্শন ( ঈসার ) করেছেন এবং নিজের সমুদয় ধন সম্পদ হযরত রাসূলুল্লাহ ( সা .) এবং বনী হাশিম যারা ছিলেন মহানবীর ( সা.) হিফাযত কারী তাদের জীবন প্রাণ রক্ষা করেছেন । আর ঠিক একই ভাবে হযরত  যুদ্ধের ময়দানে আলীর ( আ.) অতূলনীয় বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ইসলামের প্রসার ও বিস্তৃতির ক্ষেত্রে অনবদ্য অতূলনীয় সমকক্ষহীন ভূমিকা পালন করেছিল । আর এ ব্যাপারে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সা.) যথার্থ বলেছেন :

ضَرْبَةُ عَلِيٍّ یَوْمَ الْخَنْدَقِ أَفْضَلُ مِنْ عِبَادَةِ الثَّقَلَیْنِ .

খন্দকের দিবসে আলীর তরবারির আঘাতটি সাক্বালাইনের ( গোটা জ্বিন ও মানব জাতি ) ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম । ( দ্র : ইহকাকুল হক , খ : ৬ , পৃ : ৫৪ ও ৫৫ এবং হযরত খাদীজা ত্যাগ তীতিক্ষা ও প্রতিরোধের মূর্ত প্রতীক , পৃ : ১৭৫ )

    উল্লেখ্য যে , খন্দকের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে জঙ্গে আহযাব ( গাযওয়াতুল আহযাব ) বা দলসমূহের যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ । এ যুদ্ধে আরবের সকল কাফির ও মুশরিক গোত্র ও দল ইসলাম , মহানবী ( সা.) এবং মুসলমানদের চূড়ান্ত ধ্বংসের লক্ষ্যে ১০,০০০ যোদ্ধার সম্মিলিত এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করে পবিত্র মদীনা নগরী অবরোধ করে । এ যুদ্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ , মুশরিক কাফিররা যদি এ যুদ্ধে সফল হত তাহলে ইসলাম ও মুসলমানদের অস্তিস্তই বিলুপ্ত হয়ে যেত। আমর ইবনে আব্দে ওয়ুদ্দ্ ছিল সম্মিলিত কাফির মুশরিক সেনাবাহিনীর সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা যে একাই সহস্র বীর যোদ্ধা সম বীর বলে খ্যাতি লাভ করেছিল । এই যোদ্ধা মুসলমানদের প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল করে তাদের মনে ভয়ভীতিবোধ সঞ্চার করার জন্য আস্ফালন ও দ্বৈত যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ করতে থাকলে কেবল হযরত আলীই ( আ .) তাঁর সাথে দ্বৈত যুদ্ধে

সাড়া দেন এবং তরবারির এক আঘাতে তাকে সমদ্বিখণ্ডিত করে ফেললে মহানবী ( সা.) প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক এ উক্তিটি করেছিলেন :

ضَرْبَةُ عَلِيٍّ یَوْمَ الْخَنْدَقِ أَفْضَلُ مِنْ عِبَادَةِ الثَّقَلَیْنِ .

" খন্দকের দিবসে আলীর তরবারির আঘাতটি সাক্বালাইনের ( গোটা জ্বিন ও মানব জাতি ) ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম । "

     এ ছাড়া ইসলামের ভাগ্য নির্ধারণী যুদ্ধ সমূহে নি:সন্দেহে হযরত আলীর ( আ.) ভূমিকা ছিল ভাগ্য নির্ধারণী ।

        আর হযরত খাদীজা ( আ.) সবসময় বিশেষ করে সবচেয়ে বিপদসংকুল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ছিলেন মহানবীর ( সা.) খাঁটি নিবেদিত সঙ্গী , পরামর্শ দাতা ও সহচর । ইসলাম প্রচার করার জন্য শত্রুদের প্রতিনিয়ত সকল যাতনা ও দুর্ব্যবহার মুখে রাসূলুল্লাহ ( সা.) যখন বাসায় ফিরে আসতেন তখন হযরত খাদীজার সান্নিধ্য ও তাঁর ভালোবাসা ও মায়ামমতাপূর্ণ স্নিগ্ধ ব্যবহারে তাঁর ( সা.) সকল দু:খ কষ্ট ও বেদনা দূর হয়ে যেত এবং তিনি ( সা.) হযরত খাদীজার সান্নিধ্যে অনাবিল স্বর্গীয় আনন্দ ও শান্তি লাভ করতেন । এই বিপদসংকুল ও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে আল্লাহ পাক রাসূলুল্লাহকে ( সা.) হযরত খাদীজার মতো এমন উপযুক্ত পূণ্যবতী সহধর্মিণী ও স্ত্রী দান করেছিলেন । হযরত খাদীজা ( আ.) তাঁর সকল ধন - সম্পদ ও সম্পত্তি ইসলাম প্রচারের জন্য মহানবীর ( সা. ) খেদমতে উৎসর্গ করেন । আর এ কারণেই বলা হয়েছে :

مَا قَامَ الْإِسْلَامُ إِلَّا بِسَیْفِ عَلِيٍّ وَ ثَرْوَةٍ خَدِیْجَةَ.

আলীর তরবারি ও খাদীজার ধন - সম্পদ ব্যতীত ইসলাম কখনো প্রতিষ্ঠা লাভ করত না ।

   এখন আমরা মহান আল্লাহ পাকের কাছে , দ্বীনে ইসলামে এবং হযরত মুহাম্মাদের ( সা .) কাছে উম্মুল মুমিনীন ( মুমিনদের মা ) হযরত খাদীজার সুউচ্চ মাকাম ও মর্যাদা সংক্রান্ত মহানবীর ( সা .) কতিপয় হাদীসের উদ্ধৃতি পেশ করব :

 

হযরত খাদীজা (আ.) জান্নাতবাসী নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ চার নারীর একজন :

 

   ১.ইকরামা থেকে বর্ণিত : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রা.) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) চারটি রেখা এঁকে বললেন : তোমরা কি জান যে , এ চার রেখা কী ? তখন সবাই বলল : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ( সা. ) সবচেয়ে ভালো জানেন । অত:পর মহানবী ( সা.) বললেন : বেহেশতবাসী নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন : খাদীজা , ফাতিমা , মারয়াম ও আসিয়া ।

وَ قَالَ عِكْرَمَةُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : خَطَّ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَ سَلَّمَ أَرْبَعَةَ خُطُوْطٍ فَقَالَ : أَ تَدْرُوْنَ مَا هٰذَا ؟ قَالُوْا : اللّٰهُ وَ رَسُوْلُهُ أَعْلَمُ . قَالَ : أَفْضَلُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ خَدِيْجَةُ وَ فَاطِمَةُ وَ مَرْيَمُ وَ آسِيَةُ .

( দ্র : তাহযীব আত তাহযীব , খ : ৪৪১ - ৪৪২ , পৃ : ১২ ; আল্ - ইস্তীয়াব , খ : ২ , পৃ : ৫০৭ , ৫০৮ )

     ২. ইবনে আব্বাস বলেন : রাসূলুল্লাহ ( সা.) যমীনের উপর চারটি রেখা টেনে বললেন : তোমরা জান কি : এটা কী ? তখন সবাই বলল : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সবচেয়ে বেশি জানেন । অত:পর রাসূলুল্লাহ ( সা :) বললেন : বেহেশতবাসী নারীদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হলেন চার জন : ১. খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ , ফাতিমা মুহাম্মদ ( সা.) , .......

( হাকিম নিশাপুরী বলেন : ) এ হাদীসটি সহীহুল ইসনাদ এবং বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেন নি । আর আল্লামা যাহাবীও আত তালখীস গ্রন্থে তার ( হাকিম নিশাপুরী ) সাথে ঐকমত্য পোষণ করে বলেছেন : ( এ হাদীসটি ) সহীহ । ( দ্র : আল - মুস্তাদ্রাক , খ : ৩ , পৃ : ৩৭০ , হাদীস নং ৪৭১৫ )

 

عن عكرمة عن ابن عباس ( رض ) قال : خَطَّ رَسُوْلُ اللّٰهِ ( ص ) فِي الْأَرْضِ أَرْبَعَةَ خُطُوْطٍ ثُمَّ قَالَ : أَ تَدْرُوْنَ مَا هٰذَا ؟ فَقَالُوْا : اَللّٰهُ وَ رَسُوْلُهُ أَعْلَمُ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ( ص ) : أَفْضَلُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ أرْبَعَةٌ : خَدِيْجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ و َ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ الحَدِيْث ........... هٰذَا حَدِيْثٍ صَحِيْحُ الإِسْنَادِ وَ لَمْ يُخْرِجَاهُ .

وَافَقَهُ الذَّهَبِيُّ فِي التَّلْخِيْصِ : صَحِيْحٌ .

 

৩. ইকরামা থেকে বর্ণিত : ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন : মহানবী ( সা.) চারটি রেখা অংকন করে বললেন : তোমরা জান কি : এটা কী ? তখন সবাই বলল : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সবচেয়ে ভালো জানেন । অত:পর তিনি ( সা:) বললেন : বেহেশতের অধিবাসী নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন : খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ , ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ , মারয়াম বিনতে ইমরান এবং ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুযাহিম । মহান আল্লাহ পবিত্র আমাদেরকে কুরআনে তাঁর ( আসিয়া ) অবস্থান ও মর্যাদার সংবাদ দিয়ে বলেছেন : তিনি ( আসিয়া ) প্রার্থনা করে বলেছিলেন : হে আমার প্রভু , আমার জন্য জান্নাতে ( আপনি ) একটি বাড়ী নির্মাণ করে দিন এবং আমাকে ফিরআউন ও তার কর্মকাণ্ড থেকে নাজাত ( মুক্তি ) দিন এবং আমাকে যালিম কওম ( অত্যাচারী সম্প্রদায় ) থেকে মুক্তি ( নাজাত ) দিন ( তাহরীম : ১১)।

হাকিম নিশাপুরী বলেন : এ হাদীসটি সহীহুল ইসনাদ এবং বুখারী ও মুসলিম ঠিক এ মতন ও শব্দ সহকারে বর্ণনা করেন নি ; তবে তারা ( দুজন : বুখারী ও মুসলিম ) যে হাদীসটি আবূল আব্বাস মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকূব  আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন ..... হিশাম ইবনে উরওয়াহ  থেকে সেটার উপর ঐকমত্য পোষণ ( ইত্তেফাক ) করেছেন ।

৩৮৮৬ : আল্লামাহ যাহাবী আত - তালখীস গ্রন্থে তার ( হাকিম নিশাপুরী ) একমত পোষণ করে বলেছেন : " ( ৩৮৮৬ নং হাদীসটি ) সহীহ । "

( দ্র : আল - মুস্তাদরাক , খ : ৩ , পৃ : ১০০ , হাদীস নং ৩৮৮৬ )

عن عكرمة عن ابن عباس ( رض ) قال : خَطَّ رَسُوْلُ اللّٰهِ ( ص) أَرْبَعَ خُطُوْطٍ ثُمَّ قَالَ : أَ تَدْرُوْنَ مَا هٰذَا ؟ قَالُوْا : اللّٰهُ وَ رَسُوْلُهُ أَعْلَمُ . قَالَ : إِنَّ أَفْضَلَ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ : خَدِيْجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ ، وَ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ ، وَ مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَ آسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِمٍ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ ، مَعَ مَا قَصَّ اللّٰهُ عَلَيْنَا مِنْ خَبَرِهَا فِي الْقُرْآنِ : قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِيْ بَيْتَاً فِي الْجَنَّةِ وَ نَجِّنِيْ مِنْ فِرْعَوْنَ وَ عَمَلِهِ وَ نَجِّنِيْ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ . التحريم : ١١ .

هٰذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحُ الإِسْنَادِ وَ لَمْ يُخْرِجَاهُ بِهٰذَا اللَّفْظِ ، وَ إِنّما اتّفقا على الحديث الذي حدثناه أبو العباس محمد بن يعقوب ، ثنا أحمد بن عبد الجبار ، ثنا يونس بن بكير ، عن هشام بن عروة .

٣٨٨٦ . وَافَقَهُ الذَّهَبِيُّ فِي التَّلْخِيْصِ : صَحِيْحٌ .

নারীদের চার নেত্রীর একজন হযরত খাদীজা ( আ.) :

 

৪.ইবনে আব্বাস ( রা .) থেকে বর্ণিত : মহানবী ( সা.) বলেছেন :

চার নারী তাদের নিজ নিজ সমসাময়িক জগৎ ও প্রজন্মের নারীদের নেত্রী : মারয়াম বিনতে ইমরান , আসিয়া বিনতে মুযাহিম , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ এবং ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ ( সা .) ।আর সমগ্র বিশ্বজগতে সকল প্রজন্মে তাদের ( এই শ্রেষ্ঠ চার নারী ) মধ্যে  শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছেন ফাতিমা (আ.) ।

عن ابن عباس عن النبيّ ( ص) أَنَّهُ قَالَ : أَرْبَعُ نِسْوَةٍ سَادَاتُ عَالَمِهِنَّ : مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَ آسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِمٍ وَ خَدِيْجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ ( ص ) وَ أَفْضَلُهُنَّ عَالَمَاً فَاطِمَةُ .

( দ্র : যাখায়িরুল উকবা , পৃ : ৪৪ ; তাফসীর - ই রূহুল্ মাআনী , খ : ৩ , পৃ : ২০৬ )।

জান্নাতের নারীদের চার নেত্রীর একজন হযরত খাদীজা (আ.) :

   ৫. উরওয়াহ থেকে বর্ণিত : হযরত আয়েশা (রা:) হযরত ফাতিমা( আ:) বিনতে মুহাম্মাদ ( সা:)কে বললেন : আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দেব যে আমি রাসূলুল্লাহকে (সা:) বলতে শুনেছি : জান্নাতের নারীদের নেত্রীরা চারজন : মারয়াম বিনতে ইমরান , ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ এবং আসিয়া ।

আল্লামা যাহাবী আত তালখীস গ্রন্থে বলেছেন : ইবনে আবী আওফার হাদীসের উপর অনুরূপ একমত পোষণ ( ইত্তেফাক ) করেছেন বুখারী ও মুসলিম । আর হযরত আয়েশা (রা:) বলেন : আমি রাসূলুল্লাহকে ( সা:) বলতে শুনেছি :

বেহেশতের নারীদের নেত্রীরা হচ্ছেন চারজন : মারয়াম , ফাতিমা , খাদীজা ও আসিয়া এবং তা ( এ রিওয়ায়তটি ) বুখারী ও মুসলিমের শর্তে ।

( দ্র : আল্ - মুস্তাদরাক্ আলাপ সাহীহাইন্ , খ : ৩ , পৃ : ৩৯৬ )

 

عن عروةَ قال :قالت عائشةُ لفاطمةَ بنت رسولِ اللّٰهِ (ص) : أَ لَا أُبَشِّرُكِ أَنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ (ص) يَقُوْلُ : سَيِّدَاتُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ أَرْبَعٌ : مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ وَ خَدِيْجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَ آسِيَةُ.

قال الذهبي في التلخيص : قد اتّفقا على حديثِ ابْنِ أبي أوفىٰ نحوه و قالت عائشةُ: سمعتُ رسولَ الله (ص) يقول : سيِّداتُ نساءِ أهلِ الجنَّةِ أربعٌ : مريمُ و فاطمةُ و خديجةُ و آسيَةُ و هو على شرطِ البخاري و مسلمٍ .

 

জগৎ সমূহের নারীদের মধ্য থেকে যথেষ্ট অর্থাৎ মনোনীত চার নারীর একজন হযরত খাদীজা (আ.) :

     ৬. হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। মহানবী (সা.) বলেছেন : জগৎ সমূহের নারীদের মধ্য থেকে কেবল যথেষ্ট ( এই চার নারী ) : মারয়াম বিনতে ইমরান , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ , ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ এবং ফির'আওনের স্ত্রী আসিয়া ।

আবূ ঈসা তিরমিযী বলেন : এটা সহীহ হাদীস ।

( দ্র : বিহারুল আন্ওয়ার্ , খ : ১৬ , পৃ : ৭ ; সুনান আত তিরমিযী পৃ : ১০০৭ , হাদীস নং ৩৮৮৬ ; আল - ইস্তীআব্ , খ : ২ , পৃ : ৫৫৫ )

عن أنس ( رض ) أنّ النبيّ ( ص) قال : حَسْبُكَ مِنْ نِسَاءِ الْعَالَمِيْنَ : مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَ خديجةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ وَ آسِيَةُ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ .

قَالَ أَبُوْ عِيْسىٰ : هٰذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحٌ.

হযরত খাদীজা (আ.) জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ চার নারীর অন্তর্ভুক্ত :

৭. ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত : মহানবী ( সা.) বলেছেন : জান্নাতের নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন : মারয়াম বিনতে ইমরান , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ , ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ এবং ফির আওনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুযাহিম । ( দ্র : বিহারুল্ আন্ওয়ার্ , খ: ১৩ , পৃ : ১৬২ ও খ : ১৬ , পৃ : ২ ;  )

عن ابن عباس ( رض) :

خَيْرُ نِسَاءِالْجَنَّةِ مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَ خديجةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ وَ آسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِمٍ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ.

হযরত খাদীজা ( আ.) জগৎ সমূহের সকল প্রজন্মের নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ চার নারীর একজন :

৮.হযরত আনাস ( রা.) থেকে : রাসূলুল্লাহ ( সা.) বলেছেন : জগৎ সমূহের সকল প্রজন্মের নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ( উত্তম ) হচ্ছেন : মারয়াম বিনতে ইমরান , আসিয়া বিনতে মুযাহিম , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্  খুওয়াইলিদ্ এবং ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ । (( দ্র : আল্ - ইস্তীয়াব , খ : ২ , পৃ : ৫০৮ এবং ৫০৭ পৃষ্ঠায় ধরনের রিওয়ায়ত হযরত আবু হুরায়রা ( রা:) থেকে ও বর্ণিত হয়েছে : মহানবী ( সা :) বলেছেন : জগৎ সমূহের সকল প্রজন্মের নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ চার জন : মারয়াম বিনতে ইমরান , ফির আওনের স্ত্রী বিনতে মুযাহিম (মুযাহিম তনয়া আসিয়া ) , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ এবং ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ ( সা.) । ))

عن أنس ، قال : قال رسولِ اللّٰهِ ( ص) : خَيْرُ نِسَاءِ الْعِالَمِيْنَ مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ ، وَ آسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِمٍ و خَدِيْجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ (ص).

 

পূর্বোক্ত হাদীস সমূহ সম্পর্কে কিছু কথা :

    রাসূলুল্লাহ (সা:) কেন চারটি রেখা এঁকে ছিলেন ?

     এ প্রশ্নের জবাবে বলতে হয় : তিনি ( সা:) সবার সামনে চার রেখা

অংকন করে আসলে সমগ্র সৃষ্টি জগতের সকল প্রজন্মের নারীকুলে শুধু মাত্র ঐ চার শ্রেষ্ঠ নারীর  নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্বের কথা ( الأفضلية المطلقة ) পরম নিরঙ্কুশ নিখুঁত সীমিত করণ ( الحصر المثالي ) ও সীমাবদ্ধ করণ প্রক্রিয়ায় স্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ব্যক্ত ও প্রকাশ করেছেন যাতে করে ভবিষ্যতে তাঁর অবর্তমানে কোনো ব্যক্তি যেন দাবী করতে না পারে যে উল্লেখিত এই চার নারী ব্যতীত আরো নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী নারী আছেন । অর্থাৎ মহানবী (সা:) সর্বশ্রেষ্ঠ নারীদের সংখ্যা - যা হচ্ছে ৪ তা - নির্ধারণ করেছেন ; তিনি সৃষ্টি জগতের সর্বশ্রেষ্ট নারীদের সংখ্যা তাঁদের নাম সহ ৪ এর মধ্যে সীমিত ও সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন যা অলংঘনীয় । অতএব যদি এতদসত্ত্বেও  কোনো ব্যক্তি দাবী করে যে উক্ত ৪ শ্রেষ্ঠ নারী ছাড়াও আরও নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী নারী আছেন  তাহলে সুনির্দিষ্ট সংখ্যায় ব্যক্ত ও প্রকাশিত উক্ত পরম নিরঙ্কুশ নিখুঁত  সীমাবদ্ধ ও সীমিত করণ নীতির ( আল - হাসর আল মিসালী الحصر المثالي ) আলোকে ঐ দাবী মিথ্যা প্রতিপন্ন হবে । আর এ নীতি ও সূত্র হবে ঐ মিথ্যা দাবিকারীর বিপক্ষে শক্ত দলীল ( হুজ্জত ) ।

     মহানবী ( সা.) কর্তৃক এ নীতি অবলম্বন এ বিষয়টারও ইঙ্গিত বহ যে ভবিষ্যতে মহানবীর সা রিহলাতের ( ওফাত ) পরে কিছু ব্যক্তি এই চার নারী ছাড়াও আরো কিছু নারীর নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্বের ( الأفضلية المطلقة ) মিথ্যা দাবি করবে । আর তাঁর ( সা.) পরে এ ধরণের দাবিও করা হয়েছে ।

     মহানবীর ( সা.) পথ ও মতই হচ্ছে একমাত্র সিরাতে মুস্তাকীম ( সরল সঠিক পথ ) অর্থাৎ হিদায়তের পথ । আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রা.) বলেন : মহানবী ( সা .) একদা নিজ হাতে একটি সরল রেখা এঁকে বললেন : এটাই হচ্ছে মহান আল্লাহর সরল সঠিক পথ । এর পর তিনি ঐ রেখার ডান ও বাম পাশে আরো কতকগুলো রেখা এঁকে বললেন : এগুলো হচ্ছে এমন সব পথ যেগুলোর প্রতিটির দিকে ইবলীস শয়তান সবাইকে ডাকছে ও আহ্বান করছে ( অর্থাৎ এগুলো সবই হচ্ছে গুমরাহীর পথ ) । এরপর তিনি ( সা.) সূরা - ই আন্'আমের ১৫৩ নং আয়াত তিলাওয়াত করলেন :

وَ أَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمَاً فَاتَّبِعُوْهُ ، وَ لَا تَتَّبِعُوْا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهِ .

আর এটাই হচ্ছে আমার পথ যা হচ্ছে সরল সঠিক পথ । অতএব তোমরা ( সবাই ) এর অনুসরণ করবে । আর তোমরা (এ পথ বাদ দিয়ে ) অন্য সকল পথের অনুসরণ করো না ; আর যদি তা করো তাহলে তোমরা ( সবাই ) তাঁর ( মহান আল্লাহ )  পথ থেকে বিচ্যুত

হয়ে যাবে । ( সূরা -ই আন্'আম : ১৫৩ )

     আরেকটি বিষয় এখানে সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য । আর তা হলো :

       চার শ্রেষ্ঠ নারীর পরিচিতিমূলক এ সব হাদীস ও রিওয়ায়তের কোনো কোনোটিতে ( ১নং , ২নং ও ৩নং হাদীস ) হযরত খাদীজার নাম সর্বাগ্রে এবং

কোনো কোনো হাদীসে ( ৪ , ৫ , ৬  ৭ নং ও ৮ নং হাদীস ) হযরত মারয়ামের  ( আ .) নাম সর্বাগ্রে উল্লেখিত হয়েছে । আসলে এ থেকে যে বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায়  তা হচ্ছে যে , এ সব হাদীসের লক্ষ্য হচ্ছে স্রেফ সর্বশ্রেষ্ঠ চার নারীকে পরিচিত

করিয়ে দেয়া ; তবে সর্বশ্রেষ্ঠ এ চার নারীর মধ্যে কে সর্বশ্রেষ্ঠ তা ব্যক্ত ও উল্লেখ করা এ সব হাদীসের লক্ষ্য নয় । তাই আমরা দেখতে পাই যে কতিপয় হাদীসে হযরত খাদীজার নাম সর্বাগ্রে এবং কতিপয় হাদীসে হযরত মারয়ামের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখিত হয়েছে । কেবল একটি হাদীসে  ( এ প্রবন্ধের ৪ নং হাদীস ) উক্ত চার নারীকে নিজ নিজ যুগ অর্থাৎ সমসাময়িক প্রজন্মের নারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম বলার সাথে সাথে হযরত ফাতিমাকে (আ.) সমগ্র বিশ্ব জগতে সকল প্রজন্মে শ্রেষ্ঠ এই চার নারীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম বলা হয়েছে ।

১০ রমযান  উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরার ( আ.) শাহাদাত সম ওফাত :

হযরত রাসূলুল্লাহর ( সা.) প্রথম সহধর্মিণী হযরত খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ ( আ.) এর শাহাদাত সম ওফাত দিবস ১০ রমযান । এ দিন হিজরতের তিন বছর আগে পবিত্র মক্কায় তিনি ( আ . ) মৃত্যু বরণ করেন । মহানবী ( সা .) ও বনি হাশিমের উপর কুরাইশ গোত্রের সার্বিক কঠিন অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবরোধ আরোপ করলে শে'বে আবী তালিবে( আবূ তালিবের গিরি পথ ও উপত্যকা ) তিন বছরের অধিক কাল মহানবী (সা.) , হযরত আবূ তালিব , হযরত আলী (আ .) , হযরত খাদীজা ( আ. ) , হযরত ফাতিমা ( আ.) এবং বনী হাশিম এই শে'বে আবী তালিবে বহির্জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্তরিন ও অবরুদ্ধ জীবন যাপন করতে বাধ্য হন যা ছিল অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টকর । এ ধরণের তীব্র কষ্টকর পরিস্থিতিতে বৃদ্ধ হযরত আবূ তালিব ও হযরত খাদীজার ( আ.) শারীরিক অবস্থার ভয়ানক অবনতি হয় এবং দীর্ঘ তিন বছরের অধিক কাল ধরে কুরাইশদের অবরোধের অবসান হওয়ার পরপর প্রথমে হযরত আবূ তালিব ( আ.) ও তারপরে হযরত খাদীজা (আ.) ইন্তেকাল করেন । এ দুই আপনজন যারা ছিলেন  কুরাইশদের সকল অন্যায় ,  অত্যাচার , অবিচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে মহানবীর ( সা.) একনিষ্ঠ সাহায্য কারী , আশ্রয়স্থল ও পৃষ্ঠপোষক তাদের মৃত্যুতে মহানবী (সা.) , হযরত ফাতিমা (আ.) , হযরত আলী (আ.) ও বনী হাশিম তীব্র শোকাকীভূত হন । আর সেজন্যই রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আবূ তালিব ও হযরত খাদীজার ওফাতের বছরের নামকরন করেছিলেন আমুল্ হুয্ন্ ( عام الحزن ) অর্থাৎ শোকের বছর । আর এ থেকে স্পষ্ট হয়ে মহানবীর ( সা.) কাছে ও ইসলামের ইতিহাসে এ দুই ব্যক্তির অপরিসীম গুরুত্ব , অবদান ও খেদমত । হযরত আবূ তালিব ( আ.) সবসময় মহানবীকে ( সা.) কুরাইশদের অনিষ্ট ও ক্ষতিসাধন  থেকে রক্ষা করতেন । কুরাইশরা হযরত আবু তালিবের মৃত্যুর আগে মহানবীকে প্রকাশ্যে হত্যার করার উদ্যোগ নেয়ার সাহস করেনি যদিও শে'বে আবী তালিবে অবরুদ্ধ জীবন যাপনের সময় ও তার আগে বেশ কয়েক বার কুরাইশদের  মহানবীকে ( সা.) গোপনে হত্যার ষড়যন্ত্র হযরত আবূ তালিব নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন । ঐ তিন বছরের অধিক কাল স্থায়ী শে'বে আবী তালিবে ( আবূ তালিবের গিরি পথ ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবরোধে হযরত আবূ তালিব ও হযরত খাদীজা তাদের সমুদয় ধন -সম্পদ অবরুদ্ধদের সেবায় ব্যয় করেছিলেন । রিওয়ায়তে বর্ণিত হয়েছে :

وَ أَنْفَقَ أَبُوْ طَالِبٍ وَ خَدِیْجَةُ جَمِیْعَ مَالَیْهِمَا.

হযরত আবূ তালিব ( আ.) ও হযরত খাদীজা ( আ. ) ( ইসলাম এবং অবরুদ্ধদের জন্য ) তাদের সমুদয় সম্পদ ব্যয় করেন । আর এর ফলে হযরত খাদীজার সকল ধন সম্পদ শেষ হয়ে যায় । তিনি ( আ.) বলেছেন : আমার দুটো চামড়ার শিট বা টুকরা  ছাড়া আর কিছুই বিদ্যমান ছিল না ; ঐ দুটো চামড়ার টুকরার একটি বিশ্রামের সময় বিছানার চাদর (হিসাবে) এবং অন্যটি কম্বল ( গায়ের চাদর )  হিসাবে আমি ব্যবহার করতাম ।

    আলীর তরবারি ও খাদীজার ধন সম্পদ ব্যতীত ইসলাম কখনো প্রতিষ্ঠা লাভ করত না । ( দ্র : সুলাইমানী কিত্তানী , ফাতিমাতুয যাহরা ওয়াতারুন ফী মুহাম্মাদ, পৃ : ১১২ )।

   হযরত খাদীজার অধিকাংশ ধন সম্পদ এই তিন চার বছরের অবরোধে ব্যয় ও শেষ হয়ে যায় । কারণ বনী হাশিম ও মহানবীর শেবে আবী তালিবে অবরুদ্ধ থাকা কালে হযরত খাদীজার জামাতা ( তাঁর মেয়ের স্বামী ) আবূল আস ইবনে রবী উট বোঝাই গম ও খেজুর নিয়ে ঐ উপত্যকায় নিয়ে যেতেন এবং অনেক কষ্ট করে ও বিপদের ঝুঁকি নিয়ে খাদ্য অভুক্ত বনী হাশিমের কাছে পৌঁছে দিতেন কুরাইশ কাফির মুশরিকদের অবরোধের কারণে যারা ছিলেন তীব্র খাদ্য সংকটে । এ তিন বছরের অধিক  অবরোধ কালে বনী হাশিমের খাদ্য খাবারের ব্যবস্থা করা হত হযরত খাদীজার ধন সম্পদ থেকে । ( দ্র : রায়াহীনুশ শরীআহ , পৃ : ২১১ ) । হযরত খাদীজা ( আ .) এ সময় অপার ত্যাগ তীতিক্ষা প্রদর্শন ( ঈসার ) করেছেন এবং নিজের সমুদয় ধন সম্পদ হযরত রাসূলুল্লাহ ( সা .) এবং বনী হাশিম যারা ছিলেন মহানবীর ( সা.) হিফাযত কারী তাদের জীবন প্রাণ রক্ষা করেছেন । আর ঠিক একই ভাবে হযরত  যুদ্ধের ময়দানে আলীর ( আ.) অতূলনীয় বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ইসলামের প্রসার ও বিস্তৃতির ক্ষেত্রে অনবদ্য অতূলনীয় সমকক্ষহীন ভূমিকা পালন করেছিল । আর এ ব্যাপারে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সা.) যথার্থ বলেছেন :

ضَرْبَةُ عَلِيٍّ یَوْمَ الْخَنْدَقِ أَفْضَلُ مِنْ عِبَادَةِ الثَّقَلَیْنِ .

খন্দকের দিবসে আলীর তরবারির আঘাতটি সাক্বালাইনের ( গোটা জ্বিন ও মানব জাতি ) ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম । ( দ্র : ইহকাকুল হক , খ : ৬ , পৃ : ৫৪ ও ৫৫ এবং হযরত খাদীজা ত্যাগ তীতিক্ষা ও প্রতিরোধের মূর্ত প্রতীক , পৃ : ১৭৫ )

    উল্লেখ্য যে , খন্দকের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে জঙ্গে আহযাব ( গাযওয়াতুল আহযাব ) বা দলসমূহের যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ । এ যুদ্ধে আরবের সকল কাফির ও মুশরিক গোত্র ও দল ইসলাম , মহানবী ( সা.) এবং মুসলমানদের চূড়ান্ত ধ্বংসের লক্ষ্যে ১০,০০০ যোদ্ধার সম্মিলিত এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করে পবিত্র মদীনা নগরী অবরোধ করে । এ যুদ্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ , মুশরিক কাফিররা যদি এ যুদ্ধে সফল হত তাহলে ইসলাম ও মুসলমানদের অস্তিস্তই বিলুপ্ত হয়ে যেত। আমর ইবনে আব্দে ওয়ুদ্দ্ ছিল সম্মিলিত কাফির মুশরিক সেনাবাহিনীর সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা যে একাই সহস্র বীর যোদ্ধা সম বীর বলে খ্যাতি লাভ করেছিল । এই যোদ্ধা মুসলমানদের প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল করে তাদের মনে ভয়ভীতিবোধ সঞ্চার করার জন্য আস্ফালন ও দ্বৈত যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ করতে থাকলে কেবল হযরত আলীই ( আ .) তাঁর সাথে দ্বৈত যুদ্ধে

সাড়া দেন এবং তরবারির এক আঘাতে তাকে সমদ্বিখণ্ডিত করে ফেললে মহানবী ( সা.) প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক এ উক্তিটি করেছিলেন :

ضَرْبَةُ عَلِيٍّ یَوْمَ الْخَنْدَقِ أَفْضَلُ مِنْ عِبَادَةِ الثَّقَلَیْنِ .

" খন্দকের দিবসে আলীর তরবারির আঘাতটি সাক্বালাইনের ( গোটা জ্বিন ও মানব জাতি ) ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম । "

     এ ছাড়া ইসলামের ভাগ্য নির্ধারণী যুদ্ধ সমূহে নি:সন্দেহে হযরত আলীর ( আ.) ভূমিকা ছিল ভাগ্য নির্ধারণী ।

        আর হযরত খাদীজা ( আ.) সবসময় বিশেষ করে সবচেয়ে বিপদসংকুল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ছিলেন মহানবীর ( সা.) খাঁটি নিবেদিত সঙ্গী , পরামর্শ দাতা ও সহচর । ইসলাম প্রচার করার জন্য শত্রুদের প্রতিনিয়ত সকল যাতনা ও দুর্ব্যবহার মুখে রাসূলুল্লাহ ( সা.) যখন বাসায় ফিরে আসতেন তখন হযরত খাদীজার সান্নিধ্য ও তাঁর ভালোবাসা ও মায়ামমতাপূর্ণ স্নিগ্ধ ব্যবহারে তাঁর ( সা.) সকল দু:খ কষ্ট ও বেদনা দূর হয়ে যেত এবং তিনি ( সা.) হযরত খাদীজার সান্নিধ্যে অনাবিল স্বর্গীয় আনন্দ ও শান্তি লাভ করতেন । এই বিপদসংকুল ও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে আল্লাহ পাক রাসূলুল্লাহকে ( সা.) হযরত খাদীজার মতো এমন উপযুক্ত পূণ্যবতী সহধর্মিণী ও স্ত্রী দান করেছিলেন । হযরত খাদীজা ( আ.) তাঁর সকল ধন - সম্পদ ও সম্পত্তি ইসলাম প্রচারের জন্য মহানবীর ( সা. ) খেদমতে উৎসর্গ করেন । আর এ কারণেই বলা হয়েছে :

مَا قَامَ الْإِسْلَامُ إِلَّا بِسَیْفِ عَلِيٍّ وَ ثَرْوَةٍ خَدِیْجَةَ.

আলীর তরবারি ও খাদীজার ধন - সম্পদ ব্যতীত ইসলাম কখনো প্রতিষ্ঠা লাভ করত না ।

   এখন আমরা মহান আল্লাহ পাকের কাছে , দ্বীনে ইসলামে এবং হযরত মুহাম্মাদের ( সা .) কাছে উম্মুল মুমিনীন ( মুমিনদের মা ) হযরত খাদীজার সুউচ্চ মাকাম ও মর্যাদা সংক্রান্ত মহানবীর ( সা .) কতিপয় হাদীসের উদ্ধৃতি পেশ করব :

 

হযরত খাদীজা (আ.) জান্নাতবাসী নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ চার নারীর একজন :

 

   ১.ইকরামা থেকে বর্ণিত : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রা.) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) চারটি রেখা এঁকে বললেন : তোমরা কি জান যে , এ চার রেখা কী ? তখন সবাই বলল : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ( সা. ) সবচেয়ে ভালো জানেন । অত:পর মহানবী ( সা.) বললেন : বেহেশতবাসী নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন : খাদীজা , ফাতিমা , মারয়াম ও আসিয়া ।

وَ قَالَ عِكْرَمَةُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : خَطَّ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَ سَلَّمَ أَرْبَعَةَ خُطُوْطٍ فَقَالَ : أَ تَدْرُوْنَ مَا هٰذَا ؟ قَالُوْا : اللّٰهُ وَ رَسُوْلُهُ أَعْلَمُ . قَالَ : أَفْضَلُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ خَدِيْجَةُ وَ فَاطِمَةُ وَ مَرْيَمُ وَ آسِيَةُ .

( দ্র : তাহযীব আত তাহযীব , খ : ৪৪১ - ৪৪২ , পৃ : ১২ ; আল্ - ইস্তীয়াব , খ : ২ , পৃ : ৫০৭ , ৫০৮ )

     ২. ইবনে আব্বাস বলেন : রাসূলুল্লাহ ( সা.) যমীনের উপর চারটি রেখা টেনে বললেন : তোমরা জান কি : এটা কী ? তখন সবাই বলল : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সবচেয়ে বেশি জানেন । অত:পর রাসূলুল্লাহ ( সা :) বললেন : বেহেশতবাসী নারীদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হলেন চার জন : ১. খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ , ফাতিমা মুহাম্মদ ( সা.) , .......

( হাকিম নিশাপুরী বলেন : ) এ হাদীসটি সহীহুল ইসনাদ এবং বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেন নি । আর আল্লামা যাহাবীও আত তালখীস গ্রন্থে তার ( হাকিম নিশাপুরী ) সাথে ঐকমত্য পোষণ করে বলেছেন : ( এ হাদীসটি ) সহীহ । ( দ্র : আল - মুস্তাদ্রাক , খ : ৩ , পৃ : ৩৭০ , হাদীস নং ৪৭১৫ )

 

عن عكرمة عن ابن عباس ( رض ) قال : خَطَّ رَسُوْلُ اللّٰهِ ( ص ) فِي الْأَرْضِ أَرْبَعَةَ خُطُوْطٍ ثُمَّ قَالَ : أَ تَدْرُوْنَ مَا هٰذَا ؟ فَقَالُوْا : اَللّٰهُ وَ رَسُوْلُهُ أَعْلَمُ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ( ص ) : أَفْضَلُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ أرْبَعَةٌ : خَدِيْجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ و َ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ الحَدِيْث ........... هٰذَا حَدِيْثٍ صَحِيْحُ الإِسْنَادِ وَ لَمْ يُخْرِجَاهُ .

وَافَقَهُ الذَّهَبِيُّ فِي التَّلْخِيْصِ : صَحِيْحٌ .

 

৩. ইকরামা থেকে বর্ণিত : ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন : মহানবী ( সা.) চারটি রেখা অংকন করে বললেন : তোমরা জান কি : এটা কী ? তখন সবাই বলল : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সবচেয়ে ভালো জানেন । অত:পর তিনি ( সা:) বললেন : বেহেশতের অধিবাসী নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন : খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ , ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ , মারয়াম বিনতে ইমরান এবং ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুযাহিম । মহান আল্লাহ পবিত্র আমাদেরকে কুরআনে তাঁর ( আসিয়া ) অবস্থান ও মর্যাদার সংবাদ দিয়ে বলেছেন : তিনি ( আসিয়া ) প্রার্থনা করে বলেছিলেন : হে আমার প্রভু , আমার জন্য জান্নাতে ( আপনি ) একটি বাড়ী নির্মাণ করে দিন এবং আমাকে ফিরআউন ও তার কর্মকাণ্ড থেকে নাজাত ( মুক্তি ) দিন এবং আমাকে যালিম কওম ( অত্যাচারী সম্প্রদায় ) থেকে মুক্তি ( নাজাত ) দিন ( তাহরীম : ১১)।

হাকিম নিশাপুরী বলেন : এ হাদীসটি সহীহুল ইসনাদ এবং বুখারী ও মুসলিম ঠিক এ মতন ও শব্দ সহকারে বর্ণনা করেন নি ; তবে তারা ( দুজন : বুখারী ও মুসলিম ) যে হাদীসটি আবূল আব্বাস মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকূব  আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন ..... হিশাম ইবনে উরওয়াহ  থেকে সেটার উপর ঐকমত্য পোষণ ( ইত্তেফাক ) করেছেন ।

৩৮৮৬ : আল্লামাহ যাহাবী আত - তালখীস গ্রন্থে তার ( হাকিম নিশাপুরী ) একমত পোষণ করে বলেছেন : " ( ৩৮৮৬ নং হাদীসটি ) সহীহ । "

( দ্র : আল - মুস্তাদরাক , খ : ৩ , পৃ : ১০০ , হাদীস নং ৩৮৮৬ )

عن عكرمة عن ابن عباس ( رض ) قال : خَطَّ رَسُوْلُ اللّٰهِ ( ص) أَرْبَعَ خُطُوْطٍ ثُمَّ قَالَ : أَ تَدْرُوْنَ مَا هٰذَا ؟ قَالُوْا : اللّٰهُ وَ رَسُوْلُهُ أَعْلَمُ . قَالَ : إِنَّ أَفْضَلَ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ : خَدِيْجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ ، وَ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ ، وَ مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَ آسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِمٍ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ ، مَعَ مَا قَصَّ اللّٰهُ عَلَيْنَا مِنْ خَبَرِهَا فِي الْقُرْآنِ : قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِيْ بَيْتَاً فِي الْجَنَّةِ وَ نَجِّنِيْ مِنْ فِرْعَوْنَ وَ عَمَلِهِ وَ نَجِّنِيْ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ . التحريم : ١١ .

هٰذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحُ الإِسْنَادِ وَ لَمْ يُخْرِجَاهُ بِهٰذَا اللَّفْظِ ، وَ إِنّما اتّفقا على الحديث الذي حدثناه أبو العباس محمد بن يعقوب ، ثنا أحمد بن عبد الجبار ، ثنا يونس بن بكير ، عن هشام بن عروة .

٣٨٨٦ . وَافَقَهُ الذَّهَبِيُّ فِي التَّلْخِيْصِ : صَحِيْحٌ .

নারীদের চার নেত্রীর একজন হযরত খাদীজা ( আ.) :

 

৪.ইবনে আব্বাস ( রা .) থেকে বর্ণিত : মহানবী ( সা.) বলেছেন :

চার নারী তাদের নিজ নিজ সমসাময়িক জগৎ ও প্রজন্মের নারীদের নেত্রী : মারয়াম বিনতে ইমরান , আসিয়া বিনতে মুযাহিম , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ এবং ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ ( সা .) ।আর সমগ্র বিশ্বজগতে সকল প্রজন্মে তাদের ( এই শ্রেষ্ঠ চার নারী ) মধ্যে  শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছেন ফাতিমা (আ.) ।

عن ابن عباس عن النبيّ ( ص) أَنَّهُ قَالَ : أَرْبَعُ نِسْوَةٍ سَادَاتُ عَالَمِهِنَّ : مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَ آسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِمٍ وَ خَدِيْجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ ( ص ) وَ أَفْضَلُهُنَّ عَالَمَاً فَاطِمَةُ .

( দ্র : যাখায়িরুল উকবা , পৃ : ৪৪ ; তাফসীর - ই রূহুল্ মাআনী , খ : ৩ , পৃ : ২০৬ )।

জান্নাতের নারীদের চার নেত্রীর একজন হযরত খাদীজা (আ.) :

   ৫. উরওয়াহ থেকে বর্ণিত : হযরত আয়েশা (রা:) হযরত ফাতিমা( আ:) বিনতে মুহাম্মাদ ( সা:)কে বললেন : আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দেব যে আমি রাসূলুল্লাহকে (সা:) বলতে শুনেছি : জান্নাতের নারীদের নেত্রীরা চারজন : মারয়াম বিনতে ইমরান , ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ এবং আসিয়া ।

আল্লামা যাহাবী আত তালখীস গ্রন্থে বলেছেন : ইবনে আবী আওফার হাদীসের উপর অনুরূপ একমত পোষণ ( ইত্তেফাক ) করেছেন বুখারী ও মুসলিম । আর হযরত আয়েশা (রা:) বলেন : আমি রাসূলুল্লাহকে ( সা:) বলতে শুনেছি :

বেহেশতের নারীদের নেত্রীরা হচ্ছেন চারজন : মারয়াম , ফাতিমা , খাদীজা ও আসিয়া এবং তা ( এ রিওয়ায়তটি ) বুখারী ও মুসলিমের শর্তে ।

( দ্র : আল্ - মুস্তাদরাক্ আলাপ সাহীহাইন্ , খ : ৩ , পৃ : ৩৯৬ )

 

عن عروةَ قال :قالت عائشةُ لفاطمةَ بنت رسولِ اللّٰهِ (ص) : أَ لَا أُبَشِّرُكِ أَنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ (ص) يَقُوْلُ : سَيِّدَاتُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ أَرْبَعٌ : مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ وَ خَدِيْجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَ آسِيَةُ.

قال الذهبي في التلخيص : قد اتّفقا على حديثِ ابْنِ أبي أوفىٰ نحوه و قالت عائشةُ: سمعتُ رسولَ الله (ص) يقول : سيِّداتُ نساءِ أهلِ الجنَّةِ أربعٌ : مريمُ و فاطمةُ و خديجةُ و آسيَةُ و هو على شرطِ البخاري و مسلمٍ .

 

জগৎ সমূহের নারীদের মধ্য থেকে যথেষ্ট অর্থাৎ মনোনীত চার নারীর একজন হযরত খাদীজা (আ.) :

     ৬. হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। মহানবী (সা.) বলেছেন : জগৎ সমূহের নারীদের মধ্য থেকে কেবল যথেষ্ট ( এই চার নারী ) : মারয়াম বিনতে ইমরান , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ , ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ এবং ফির'আওনের স্ত্রী আসিয়া ।

আবূ ঈসা তিরমিযী বলেন : এটা সহীহ হাদীস ।

( দ্র : বিহারুল আন্ওয়ার্ , খ : ১৬ , পৃ : ৭ ; সুনান আত তিরমিযী পৃ : ১০০৭ , হাদীস নং ৩৮৮৬ ; আল - ইস্তীআব্ , খ : ২ , পৃ : ৫৫৫ )

عن أنس ( رض ) أنّ النبيّ ( ص) قال : حَسْبُكَ مِنْ نِسَاءِ الْعَالَمِيْنَ : مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَ خديجةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ وَ آسِيَةُ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ .

قَالَ أَبُوْ عِيْسىٰ : هٰذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحٌ.

হযরত খাদীজা (আ.) জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ চার নারীর অন্তর্ভুক্ত :

৭. ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত : মহানবী ( সা.) বলেছেন : জান্নাতের নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন : মারয়াম বিনতে ইমরান , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ , ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ এবং ফির আওনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুযাহিম । ( দ্র : বিহারুল্ আন্ওয়ার্ , খ: ১৩ , পৃ : ১৬২ ও খ : ১৬ , পৃ : ২ ;  )

عن ابن عباس ( رض) :

خَيْرُ نِسَاءِالْجَنَّةِ مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَ خديجةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ وَ آسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِمٍ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ.

হযরত খাদীজা ( আ.) জগৎ সমূহের সকল প্রজন্মের নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ চার নারীর একজন :

৮.হযরত আনাস ( রা.) থেকে : রাসূলুল্লাহ ( সা.) বলেছেন : জগৎ সমূহের সকল প্রজন্মের নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ( উত্তম ) হচ্ছেন : মারয়াম বিনতে ইমরান , আসিয়া বিনতে মুযাহিম , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্  খুওয়াইলিদ্ এবং ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ । (( দ্র : আল্ - ইস্তীয়াব , খ : ২ , পৃ : ৫০৮ এবং ৫০৭ পৃষ্ঠায় ধরনের রিওয়ায়ত হযরত আবু হুরায়রা ( রা:) থেকে ও বর্ণিত হয়েছে : মহানবী ( সা :) বলেছেন : জগৎ সমূহের সকল প্রজন্মের নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ চার জন : মারয়াম বিনতে ইমরান , ফির আওনের স্ত্রী বিনতে মুযাহিম (মুযাহিম তনয়া আসিয়া ) , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ্ এবং ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ ( সা.) । ))

عن أنس ، قال : قال رسولِ اللّٰهِ ( ص) : خَيْرُ نِسَاءِ الْعِالَمِيْنَ مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ ، وَ آسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِمٍ و خَدِيْجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ (ص).

 

পূর্বোক্ত হাদীস সমূহ সম্পর্কে কিছু কথা :

    রাসূলুল্লাহ (সা:) কেন চারটি রেখা এঁকে ছিলেন ?

     এ প্রশ্নের জবাবে বলতে হয় : তিনি ( সা:) সবার সামনে চার রেখা

অংকন করে আসলে সমগ্র সৃষ্টি জগতের সকল প্রজন্মের নারীকুলে শুধু মাত্র ঐ চার শ্রেষ্ঠ নারীর  নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্বের কথা ( الأفضلية المطلقة ) পরম নিরঙ্কুশ নিখুঁত সীমিত করণ ( الحصر المثالي ) ও সীমাবদ্ধ করণ প্রক্রিয়ায় স্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ব্যক্ত ও প্রকাশ করেছেন যাতে করে ভবিষ্যতে তাঁর অবর্তমানে কোনো ব্যক্তি যেন দাবী করতে না পারে যে উল্লেখিত এই চার নারী ব্যতীত আরো নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী নারী আছেন । অর্থাৎ মহানবী (সা:) সর্বশ্রেষ্ঠ নারীদের সংখ্যা - যা হচ্ছে ৪ তা - নির্ধারণ করেছেন ; তিনি সৃষ্টি জগতের সর্বশ্রেষ্ট নারীদের সংখ্যা তাঁদের নাম সহ ৪ এর মধ্যে সীমিত ও সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন যা অলংঘনীয় । অতএব যদি এতদসত্ত্বেও  কোনো ব্যক্তি দাবী করে যে উক্ত ৪ শ্রেষ্ঠ নারী ছাড়াও আরও নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী নারী আছেন  তাহলে সুনির্দিষ্ট সংখ্যায় ব্যক্ত ও প্রকাশিত উক্ত পরম নিরঙ্কুশ নিখুঁত  সীমাবদ্ধ ও সীমিত করণ নীতির ( আল - হাসর আল মিসালী الحصر المثالي ) আলোকে ঐ দাবী মিথ্যা প্রতিপন্ন হবে । আর এ নীতি ও সূত্র হবে ঐ মিথ্যা দাবিকারীর বিপক্ষে শক্ত দলীল ( হুজ্জত ) ।

     মহানবী ( সা.) কর্তৃক এ নীতি অবলম্বন এ বিষয়টারও ইঙ্গিত বহ যে ভবিষ্যতে মহানবীর সা রিহলাতের ( ওফাত ) পরে কিছু ব্যক্তি এই চার নারী ছাড়াও আরো কিছু নারীর নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্বের ( الأفضلية المطلقة ) মিথ্যা দাবি করবে । আর তাঁর ( সা.) পরে এ ধরণের দাবিও করা হয়েছে ।

     মহানবীর ( সা.) পথ ও মতই হচ্ছে একমাত্র সিরাতে মুস্তাকীম ( সরল সঠিক পথ ) অর্থাৎ হিদায়তের পথ । আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রা.) বলেন : মহানবী ( সা .) একদা নিজ হাতে একটি সরল রেখা এঁকে বললেন : এটাই হচ্ছে মহান আল্লাহর সরল সঠিক পথ । এর পর তিনি ঐ রেখার ডান ও বাম পাশে আরো কতকগুলো রেখা এঁকে বললেন : এগুলো হচ্ছে এমন সব পথ যেগুলোর প্রতিটির দিকে ইবলীস শয়তান সবাইকে ডাকছে ও আহ্বান করছে ( অর্থাৎ এগুলো সবই হচ্ছে গুমরাহীর পথ ) । এরপর তিনি ( সা.) সূরা - ই আন্'আমের ১৫৩ নং আয়াত তিলাওয়াত করলেন :

وَ أَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمَاً فَاتَّبِعُوْهُ ، وَ لَا تَتَّبِعُوْا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهِ .

আর এটাই হচ্ছে আমার পথ যা হচ্ছে সরল সঠিক পথ । অতএব তোমরা ( সবাই ) এর অনুসরণ করবে । আর তোমরা (এ পথ বাদ দিয়ে ) অন্য সকল পথের অনুসরণ করো না ; আর যদি তা করো তাহলে তোমরা ( সবাই ) তাঁর ( মহান আল্লাহ )  পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে । ( সূরা -ই আন্'আম : ১৫৩ )

আরেকটি বিষয় এখানে সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য । আর তা হলো :

চার শ্রেষ্ঠ নারীর পরিচিতিমূলক এ সব হাদীস ও রিওয়ায়তের কোনো কোনোটিতে ( ১নং , ২নং ও ৩নং হাদীস ) হযরত খাদীজার নাম সর্বাগ্রে এবং

কোনো কোনো হাদীসে ( ৪ , ৫ , ৬  ৭ নং ও ৮ নং হাদীস ) হযরত মারয়ামের  ( আ .) নাম সর্বাগ্রে উল্লেখিত হয়েছে । আসলে এ থেকে যে বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায়  তা হচ্ছে যে , এ সব হাদীসের লক্ষ্য হচ্ছে স্রেফ সর্বশ্রেষ্ঠ চার নারীকে পরিচিত

করিয়ে দেয়া ; তবে সর্বশ্রেষ্ঠ এ চার নারীর মধ্যে কে সর্বশ্রেষ্ঠ তা ব্যক্ত ও উল্লেখ করা এ সব হাদীসের লক্ষ্য নয় । তাই আমরা দেখতে পাই যে কতিপয় হাদীসে হযরত খাদীজার নাম সর্বাগ্রে এবং কতিপয় হাদীসে হযরত মারয়ামের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখিত হয়েছে । কেবল একটি হাদীসে  ( এ প্রবন্ধের ৪ নং হাদীস ) উক্ত চার নারীকে নিজ নিজ যুগ অর্থাৎ সমসাময়িক প্রজন্মের নারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম বলার সাথে সাথে হযরত ফাতিমাকে (আ.) সমগ্র বিশ্ব জগতে সকল প্রজন্মে শ্রেষ্ঠ এই চার নারীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম বলা হয়েছে ।

(১ম পর্ব সমাপ্ত )

 

অনুবাদ :ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
 
১০ রমযান ১৪৪৩ হি.
captcha